ভগবদ্গীতা আসলে কি? ভগবদ্গীতার উদ্দেশ্য হচ্ছে অজ্ঞানতার অন্ধকারে
আচ্ছন্ন এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মানুষকে উদ্ধার করা।
প্রতিটি মানুষই নানাভাবে দুঃখকষ্ট পাচ্ছে, যেমন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময় অর্জুনও এক মহা
সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অর্জুন ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন এবং
তার ফলে তখন ভগবান তাকে গীতার তত্ত্বজ্ঞান দান করে মোহমুক্ত করলেন।
এই জড় জগতে কেবল অর্জুনই নন, আমরা প্রত্যেকেই সর্বদাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়
জর্জরিত। এই জড় জগতের অনিত্য পরিবেশে আমাদের যে অস্তিত্ব, তা
অস্তিত্বহীনের মতো। এই জড় অস্তিত্বের অনিত্যতা আমাদের ভীতি প্রদর্শন করে,
কিন্ত তাতে ভীত হওয়ার কোন কারণ নেই। আমাদের অস্তিত্ব হচ্ছে নিত্য।
কিন্তু যে-কোন কারণবশত আমরা অসৎ সত্তায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছি। অসৎ বলতে
বোঝায় যার অস্তিত্ব নেই।
এই অনিত্য অস্তিত্বের ফলে মানুষ প্রতিনিয়ত দুঃখকষ্ট ভোগ করছে। কিন্তু
সে এতই মোহাচ্ছন্ন যে, তার দুঃখকস্ট সম্পর্কে সে মোটেই অবগত নয়।
হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কেবল দুই-একজন তাদের ক্লেশ-জর্জরিত অনিত্য অবস্থাকে
উপলব্ধি করতে পেরে অনুসন্ধান করতে শুরু করে, “আমি কে?” “আমি কোথা
থেকে এলাম?” “কেন আমি এই জটিল অবস্থায় পতিত হয়েছি?”
মানুষ যতক্ষণ পর্যস্ত না তার মোহাচ্ছন্ন অবস্থা কাটিয়ে উঠে তার দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে সচেতন
হয়ে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য অনুসন্ধান করছে, যতক্ষণ পর্যন্ত না
সে বুঝতে পারছে যে, সে দুঃখ-দুর্দশা চায় না, ততক্ষণ তাকে যথার্থ মানুষ বলে
গণ্য করা চলে না। মানুষের মনুষ্যত্বের সূচনা তখনই হয়, যখন তার মনে এই
সমস্ত প্রশ্নের উদয় হতে শুরু করে।
ব্রহ্মসূত্রে এই অনুসন্ধানকে বলা হয়
ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। অথাতো ব্রহ্মজিজ্ঞাসা। মানব-জীবনে এই ব্রহ্মজিজ্ঞাসা ব্যতীত আর
সমস্ত কর্মকেই ব্যর্থ বা অর্থহীন বলে গণ্য করা হয়।
তাই যারা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন
করতে শুরু করেছেন, “আমি কে?” “আমি কোথা থেকে এলাম?” “আমি
কেন কষ্ট পাচ্ছি?" “মৃত্যুর পরে আমি কোথায় যাব?” তারাই ভগবদ্গীতার প্রকৃত
শিক্ষার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
এই তত্ত্ব যিনি আন্তরিকভাবে অনুসন্ধান
করেন, তিনিই ভগবানের প্রতি অকৃত্রিম ভক্তি অর্জন করেন। অর্জুন ছিলেন এমনই
একজন অনুসন্ধানী শিক্ষার্থী।
দয়া করে অধ্যায় ভিত্তিক পড়তে নীচের লিঙ্ক দেখুন:
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1700
রণাঙ্গনে প্রতীক্ষমাণ সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়ে, মহাযোদ্ধা অর্জুন উভয় পক্ষের সৈনাসজ্জার মধ্যে সমবেত তাঁর অতি নিকট অন্তরঙ্গ আত্মীয়- পরিজন, আচার্যবর্গ ও বন্ধু-বান্ধবদের সকলকে যুদ্ধে প্রস্তুত হতে এবং জীবন বিসর্জনে উন্মুখ হয়ে থাকতে দেখেন। শোকে ও দুঃখে কাতর হয়ে অর্জুন শক্তিহীন হলেন, তার মন মোহাচ্ছন্ন হল এবং তিনি যুদ্ধ করার সংকল্প পরিত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:3000
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে তার শিষ্যরূপে অর্জুন আত্মসমর্পণ করেন এবং অনিত্য জড় দেহ ও শাশ্বত চিন্ময় আত্মার মূলগত পার্থক্য নির্ণয়ের মাধ্যমে অর্জুনকে শ্রীকৃষ্ণ উপদেশ প্রদান করতে শুরু করেন। দেহান্তর প্রক্রিয়া, পরমেশ্বরের উদ্দেশ্যে নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃতি এবং আত্মজ্ঞানলন্ধ মানুষের বৈশিষ্ট্যাদি সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1700
এই জড় জগতে প্রত্যেককেই কোনও ধরনের কাজে নিযুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু কর্ম সকল মানুষকে এই জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করতেও পারে, আবার তা থেকে মুক্ত করে দিতেও পারে। স্বার্থচিন্তা ব্যতিরেকে, পরমেশ্বরের সন্তুষ্টি বিধানের উদ্দেশ্যে কাজের মাধ্যমে, মানুষ তার কাজের প্রতিক্রিয়া জনিত কর্মফলের বিধিনিয়ম থেকে মুক্তি পেতে পারে এবং আত্মতত্ব ও পরমতত্বের দিব্যজ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হয়।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1700
আত্মার চিন্ময় তত্ব, ভগবৎ-তত্ব এবং ভগবান ও আত্মার সম্পর্ক - এই সব অপ্রাকৃত তত্বজ্ঞান বিশুদ্ধ ও মুক্তিপ্রদায়ী। এই প্রকার জ্ঞান হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভক্তিমূলক কর্মের (কর্মযোগ) ফলস্বরূপ। পরমেশ্বর ভগবান গীতার সুদীর্ঘ ইতিহাস, জড় জগতে যুগে যুগে তার অবতরণের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য এবং আত্মজ্ঞানলন্ধ গুরুর সান্নিধ্য লাভের আবশাকতা ব্যাখ্যা করেছেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1200
বহির্বিচারে সকল কর্তব্যকর্ম সাধন করলেও সেগুলির কর্মফল পরিত্যাগ করার মাধ্যমে, জ্ঞানবান ব্যক্তি পারমার্থিক জ্ঞানতত্ত্বের অগ্নিস্পর্শে পরিশুদ্ধি লাভ করে থাকেন, ফলে শান্তি, নিরাসক্তি, সহনশীলতা, চিন্ময় অন্তদৃষ্টি এবং শুদ্ধ আনন্দ লাভ করেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1600
নিয়মতান্ত্রিক ধ্যানচর্চার মাধ্যমে অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলন মন ও ইন্দ্রিয় আদি দমন করে এবং অন্তর্যামী পরমাত্মার চিন্তায় মনকে নিবিষ্ট রাখে। এই অনুশীলনের পরিণামে পরমেশ্রের পূর্ণ ভাবনারূপ সমাধি অর্জিত হয়।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1200
পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমতত্ত্ব, সর্বকারণের পরম কারণ এবং জড় ও চিন্ময় সর্ববিষয়ের প্রাণশক্তি। উন্নত জীবাত্মাগণ ভক্তি ভরে তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করে থাকেন, পক্ষান্তরে অধার্মিক জীবাত্মারা অন্যান্য বিষয়ের ভজনায় তাদের মন বিক্ষিপ্ত করে থাকে।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1100
আজীবন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চিন্তার মাধ্যমে এবং বিশেষ করে মৃত্যুকালে তাকে স্মরণ করে, মানুষ জড় জগতের উর্ধ্বে ভগবানের পরম ধাম লাভ করতে পারে। গীতা আরো বলছে, অতএব হে অর্জুন-সর্বদা আমাকে স্মরন করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর, তা হলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকে লাভ করবে।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1400
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান এবং পরমারাধ্য বিষয়। অপ্রাকৃত ভগবৎ- সেবার মাধ্যমে জীবাত্মা মাত্রই তার সাথে নিত্য সম্বন্ধযুক্ত। মানুষের শুদ্ধ ভক্তি পুনরুজ্জীবিত করার ফলে শ্রীকৃষ্ণের পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1500
জড় জগতের বা চিন্ময় জগতের শৌর্য, শ্রী, আড়ম্বর, উৎকর্ষ সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শক্তি ও পরম ঐশ্বর্যাবলীর আংশিক প্রকাশ মাত্র অভিব্যক্ত হয়ে আছে। সর্বকারণের পরম কারণ, সর্ববিষয়ের আশ্রয় ও সারাতিসার রূপে শ্রীকৃষ্ণ সর্বজীবেরই পরমারাধ্য বিষয়।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:2400
পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্যদৃষ্টি দান করেন এবং সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষক তাঁর অনন্ত বিশ্বরূপ প্রকাশ করেন। এভাবেই তিনি তার দিব্যতত্ত্ব অবিসংবাদিতভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। শ্রীকৃষ্ণ প্রতিপন্ন করেছেন যে, তাঁর স্বীয় অপরূপ সৌন্দর্যময় মানবরূপী আকৃতিই ভগবানের আদিরূপ। একমাত্র শুদ্ধ ভগবৎ-সেবার মাধ্যমেই মানুষ এই রূপের উপলব্ধি অর্জনে সক্ষম।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:800
চিন্ময় জগতের সর্বোত্তম প্রাপ্তি বিশুদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম লাভের পক্ষে ভক্তিযোগ বা শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্য শুদ্ধ ভক্তি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপযোগী পন্থা। যাঁরা এই পরম পন্থার বিকাশ সাধনে নিয়োজিত থাকেন, তারা দিব্য গুণাবলীর অধিকারী হন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1300
দেহ, আত্মা এবং উভয়েরও ঊর্ধ্বে পরমাত্মার পার্থক্য ধিনি উপলব্ধি করতে পারেন, তিনি এই জড় জগৎ থেকে মুক্তি লাভে সক্ষম হন। গীতা বলছে, পরমাত্মাকে যদিও সমস্ত ভুতে বিভক্তরুপে বোদ হয়, কিন্তু তিনি অবিভক্ত। তিনি সর্বভুতের পালক, সংহার কর্তা ও সৃষ্টিকর্তা।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1000
সমস্ত দেহধারী জীবাত্মা মাত্রই সত্ব রজ ও তম- জড়া প্রকৃতির এই ত্রিগুণের নিয়ন্ত্রণাধীন। পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ এই ত্রিগুণাবলীর স্থরূপ, আমাদের ওপর সেগুলির ক্রিয়াকলাপ, মানুষ কিভাবে সেগুলিকে অতিক্রম করে এবং যে-মানুষ অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত তার লক্ষণাবলী ব্যাখ্যা করেছেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:900
বৈদিক জ্ঞানের চরম উদ্দেশ্য হচ্ছে জড়-জাগতিক বন্ধন থেকে মানুষের মুক্তি লাভ এবং পরম পুরুষোত্তম ভগবানরূপে শ্রীকৃষ্ণকে উপলব্ধি করা। যে মানুষ শ্রীকৃষ্ণের পরম স্বরূপ উপলব্ধি করে, সে তার কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং তার ভক্তিমূলক সেবায় আত্মনিয়োগ করে।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:900
যারা আসুরিক গুণগুলি অর্জন করে এবং শাস্ত্রবিধি অনুসরণ না করে যথেচ্ছভাবে জীবন যাপন করে থাকে, তারা হীনজন্ম ও ক্রমশ জাগতিক বন্ধনদশা লাভ করে। কিন্তু যারা দিব্য গুণাবলীর অধিকারী এবং শাস্ত্রীয় অনুশাসন আদি মেনে বিধিবদ্ধ জীবন যাপন করেন, তারা ক্রমান্বয়ে পারমার্থিক সিদ্ধিলাভ করেন।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:1000
জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণাবলী থেকে উদ্ভূত এবং সেগুলির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী শ্রদ্ধা তিন ধরনের হয়ে থাকে। যাদের শ্রদ্ধা রাজসিক ও তামসিক, তারা নিতান্তই অনিত্য জড়-জাগতিক ফল উৎপন্ন করে। পক্ষান্তরে, শাস্ত্রীয় অনুশাসন আদি মতে অনুষ্ঠিত সত্ত্বগুণময় কার্যাবলী হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে এবং পরিণামে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ ভক্তি-শ্রদ্ধার পথে মানুষকে পরিচালিত করে ভক্তিভাবে জাগ্রত করে তোলে।
আরও পড়ুন
- তারিখ
:1 আগস্ট, 2021
- শব্দ
:2800
শ্রীকৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন ত্যাগের অর্থ এবং মানুষের ভাবনা ও কার্যকলাপের উপর প্রকৃতির গুণাবলীর প্রতিক্রিয়াগুলি কেমন হয়। তিনি ব্যাখ্যা করেছেন ব্রহ্ম উপলব্ধি, ভগবদ্গীতার মাহাত্ম্য ও গীতার চরম উপসংহার - ধর্মের সর্বোচ্চ পন্থা হচ্ছে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশো নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, যার ফলে সর্বপাপ হতে মুক্তি লাভ হয়, সম্যক জ্ঞান-উপলন্ধি অর্জিত হয় এবং শ্রীকৃষ্ণের শাশ্বত চিন্ময় পরম ধামে প্রত্যাবর্তন করা যায়।
আরও পড়ুন