preloader
  • অধ্যায়-০৪: জ্ঞানযোগ

আত্মার চিন্ময় তত্ব, ভগবৎ-তত্ব এবং ভগবান ও আত্মার সম্পর্ক - এই সব অপ্রাকৃত তত্বজ্ঞান বিশুদ্ধ ও মুক্তিপ্রদায়ী। এই প্রকার জ্ঞান হচ্ছে নিঃস্বার্থ ভক্তিমূলক কর্মের (কর্মযোগ) ফলস্বরূপ। পরমেশ্বর ভগবান গীতার সুদীর্ঘ ইতিহাস, জড় জগতে যুগে যুগে তার অবতরণের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য এবং আত্মজ্ঞানলন্ধ গুরুর সান্নিধ্য লাভের আবশাকতা ব্যাখ্যা করেছেন।

ভগবান উবাচ

ইমম বিবস্বতে যোগম্‌ প্রোক্তবান অহম্‌ অব্যয়ম্‌ । বিবস্বান মনবে প্রাহ মনুঃ ইক্ষাকবে অব্রবীত্ ।।১

ভগবান বললেন-অমি পুর্বে সুর্য্যদেব বিবশ্বানকে এই অব্যয় নিস্কাম কর্মসাধ্য জ্ঞান যোগ বলে ছিলাম। সুর্য তা মানবজাতির জনক মনুকে বলেন এবং মনু তা ইক্ষাকুকে বলেছিলেন।

এবম্‌ পরম্পরা প্রাপ্তম্‌ ইমম্‌ রাজর্ষয বিদুঃ । সঃ কালেন ইহ মহতা যোগঃ নষ্টঃ পরন্তপ ।।২

এই ভাবে পরম্পরের মাধ্যমে এই পরম বিজ্ঞান রাজর্ষিরা লাভ করেছিল কিন্তু কালের প্রভাবে পরম্পরা ছিন্ন হয়েছিল এবং সেই যোগ নষ্টপ্রায় হয়েছে।

সঃ এব অয়ম্‌ ময়া তে অদ্য যোগঃ প্রোক্তঃ পুরাতন । ভক্তঃ অসি মে সখ্য ইতি রহস্যম্‌ হি এতত্ উত্তমম্‌ ।।৩

সেই সনাতন যোগ আজ তোমাকে বললাম কারন তুমি আমার ভক্ত ও সখা তাই তুমি এই বিজ্ঞানের অতি গুরুরহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।

অর্জুন উবাচ

অপরম্‌ ভবতঃ জন্ম পরম জন্ম বিবস্বতঃ । কথম্‌ এতত্ বিজানিয়াম্‌ ত্বম আদৌ প্রক্তবান ইতি ।।৪

অর্জুন বললেন সুর্যদেব বিবশ্বানের জন্ম হয়েছিল আপনার জন্মের অনেক পুর্বে। আপনি সৃষ্টির প্ররম্ভে তাকে এই জ্ঞান উপদেশ করেছিলেন তা আমি কিকরে জানব।

ভগবান উবাচ

বহুনী মে ব্যতীতানি জন্মানি তব অর্জুন । তানি অহম্‌ বেদ সর্বানি ন ত্বম্‌ বেত্থ পরন্তপ ।।৫

ভগবান বললেন-হে পরন্তপ অর্জুন আমার এবং তোমার বহুজনম অতিত হয়েছে, আমি সে সমস্ত জন্মের কথা মনে করতে পারি তুমি তা পার না।

অজ অপি সন অব্যয় আত্মা ভূতানাম্‌ ঈশ্বর অপি সন । প্রকৃতিম্‌ স্বাম অধিষ্ঠায় সম্ভবামি আত্মমায়য়া ।।৬

যদিও আমি জন্ম রহিত এবং আমার চিন্ময় দেহ অব্যয় এবং যদিও আমি সর্ব ভূতের ঈশ্বর তবুও আমার অন্তরঙ্গা শক্তিকে আশ্রয় করে আমি স্বীয় মায়ার দ্বারা আমার আদি চিন্ময় রুপে যুগে যুগে অবতির্ন হই।

যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানিঃ ভবতি ভারত । অভ্যুত্থানম অধর্মস্য তদা আত্মনম্‌ সৃজামি অহম্‌ ।।৭

হে ভরত যখনই ধর্মের অধঃপতন হয়এবং অধর্মের অভূত্থান হয় তখনই আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতির্ন হই।

পরিত্রানায় সাধুনাম বিনাশায়ঃ চ দুস্কৃতম্‌ । ধর্ম সংস্থাপনার্থায় সম্ভাবামি যুগে যুগে ।।৮

সধুদের পরিত্রান করার জন্য এবং দুস্কৃত কারিদের বিনাশ করার জন্যএবং ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতির্ন হই।

জন্ম কর্ম চ মে দিব্যম্‌ এবম্‌ যঃ বেত্তি তত্ত্বতঃ । ত্যাক্তা দেহম্‌ পুনঃ জন্ম ন এতি মাম এতি সঃ অজৃুন ।।৯

হে অর্জুন যিনি আমার এই প্রকার দিব্য জন্ম এবং কর্ম যথাযথ ভাবে জানেন তাকে আর দেহ ত্যাগ করার পর পুনরায় জন্ম গ্রহন করতে হয় না তিনি আমার নিত্য ধাম লাভ করে।

বীত রাগ ভয় ক্রোধাঃ মন্ময়া মাম্‌ উপাশ্রিতাঃ । বহবঃ জ্ঞান তপসা পুতাঃ মদ্ভাবম আগতাঃ ।।১০

আসক্তি ভয় ক্রোধ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পুর্নরুপে আমাতে মগ্ন হয়ে, একান্ত ভাবে আমার আশ্রিত হয়ে, পুর্বে বহু বহু ব্যক্তি আমার জ্ঞান লাভ করে পবিত্র হয়েছে এবং সেই ভাবে সকলেই আমার প্রীতি লাভ করিয়াছে।

যে যথঅ মাম প্রপদ্যন্তে তান তথঅ এব ভজামি অহম্‌ । মম বর্ত অনুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ ।।১১

যে যেভাবে আমার প্রতি আত্ম সমর্পন করে,প্রপত্তি স্বীকার করে,আমি তাকে সেইভাবেই পুরুষকৃত করি। হেপার্থ সকলেই সর্বতেভাবে আমার অনুসরন করে।

কাঙ্ক্ষন্ত কর্মনাম সিদ্ধিম্‌ যজন্তে ইহ দেবতাঃ । ক্ষিপ্রম্‌ হি মানুষে লোকে সিদ্ধির্ভবতি কর্মজা ।।১২

এই জগতে মনিুষ সকাম কর্মের সিদ্ধি কামনা করে এবং তাই তারা বিভিন্ন দেব দেবীর উপসনা করে।সকাম কর্মের ফল অতি শীগ্রই লাভ কহয়।

চাতুর্বর্ন্‌ ময়া সৃষ্টম্‌ গুনকর্ম বিভাগশঃ । তস্য কর্তরম্‌ অপি মাম্‌ বিদ্ধি অকর্তারম্‌ অব্যয়ম্‌ ।।১৩

প্রকির্তির তিনটি গুন এবং কর্ম অনুসারে আমি মানুষ সমাজে চারিটি বর্নবিভাগ সৃষ্টি করিয়ছি । আমিই এই প্রথার স্রষ্টা হলেও আমাকে অকর্তা এবং অব্যয় বলে জানবে।

ন মাম্‌ কর্মানি লিম্পন্তি ন মে কর্মফলে স্পৃহা । ইতি মাম্‌ যঃ অভিজানাতি কর্মভিঃ ন সঃ বধ্যতে ।।১৪

কোন কর্ম আমাকে প্রভাবিত করতে পারে না এবং আমিও কোন কর্মফলের আকাঙ্খা করি না। আমার এই তত্ত যে জানেন তিনি কখনো সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ হয় না।

এবম্‌ জ্ঞাত্বা কৃতম্‌ কর্ম পুবৈঃ অপি মুমুক্ষুভি । কুরু কর্ম এব তস্মাত্ ত্বম পুবৈঃ পুর্বতরম্‌ কৃতম্‌ ।।১৫

প্রাচিনকালে সমস্ত পুরুষেরা এই তত্ত অবগত হয়ে সকাম কর্ম পরিত্যাগ করে মুক্তি লাভ করেছেন।অতএব তুমিও সেই প্রাচিন মহাজনের মত চিন্ময় চেতনায় তোমার কর্তব্য সম্পাদন কর।

কিম কর্ম কিম অকর্ম ইতি কবয়ঃ অপি অত্র মহিতাঃ । তত্ তে কর্ম প্রবক্ষামি যত্ জ্ঞাত্বা মোক্ষ্যসে অশুভাত্ ।।১৬

কাকে কর্ম কাকে অকর্ম বলে তা স্থির করতে বিবেকী ব্যক্তিরাও মোহিত হন। আমি সেই বিষয় তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি। তুমি তা অবগত হয়ে সমস্ত অশুভ অবস্থা থেকে মুক্ত হও।

কর্মনঃ হি অপি বোদ্ধব্যম্‌ বোদ্ধব্যম্‌ চ বিকর্মনঃ । অকর্মন চ বোদ্ধব্যম্‌ গহনা কর্মনঃ গতিঃ ।।১৭

কর্মের নিগুর তত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করা অত্যন্ত কঠিন। তাই কর্ম বিকর্ম এবং অকর্ম সম্বন্ধে যথাযথ ভাবে জানা কর্তব্য।

কর্মনি অকর্ম যঃ পশ্যেত্ অকর্মনি চ কর্ম যঃ । সঃ বুদ্ধিমান মনুষ্যেসু সঃ যুক্তঃ কৃত্স্ন কর্মকৃত্ ।।১৮

যিনি কর্মে অকর্ম দর্শন করেন এবং অকর্মে কর্ম দর্শন করেন,তিনিই মানুষের মধ্যে বুদ্ধিমান। সবরকম কর্মে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি চিনন্ময় স্তরে অধিষ্ঠিত।

যস্য সর্বে সমারম্ভাঃ কাম সংকল্প বর্জিতাঃ । জ্ঞান অগ্নি দগ্ধ কর্মানাম তম্‌ আহুঃ পন্ডিতম্‌ বুধাঃ ।।১৯

যার সমস্ত প্রচেষ্টা কাম এবং সংকল্প রহিত তিনি পুর্নজ্ঞানে অধিষ্ঠিত।জ্ঞানিগন বলেন যে তার সমস্ত কর্মের প্রতিক্রিয়া পরিশুদ্ধ জ্ঞানাগ্নি দ্বারা দগ্ধ হইয়াছে।

ত্যাক্তা কর্মফলাসঙ্গম্‌ নিত্য তৃপ্ত নিরাশ্রয়ঃ । কর্মনি অভিপ্রবৃত্তঃ অপি ন এব কিঞ্চিত্ করতি সঃ ।।২০

কর্মফলের আসক্তি সম্পুর্নরুপে ত্যাগ করে সর্বদা তৃপ্ত এবং কোন রকম আশ্রয়ের অপেক্ষা যিনি করেন না, সব রকম কর্মে যুক্ত থাকা সত্ত্বেও তিনি কর্ম ফলের আশায় কোনও কিছইু করেন না।

নিরাশীঃ যত চিত্তাত্মা ত্যক্ত সর্ব পরিগ্রহ । শরিরম্‌ কেবলম্‌ কর্ম কুর্বন ন আপ্নোতি কিল্লিষম্‌ ।।২১

এই প্রকার জ্ঞানিব্যক্তি তার মন এবং বুদ্ধিকে সর্বোতভাবে সংযত করে কার্য করেন।তিনি ফলেরআশা পরিত্যাগ করে এবং প্রভূত্ত করার প্রবৃত্তি পরিত্যাগ করে কেবল জীবন ধারনের জন্য কর্ম করেন। এই ভাবে কর্ম করার ফলে কোন রকম পাপ তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

যদৃচ্ছা লাভ সন্তুষ্টঃ দ্বন্ধ অতিতঃ বিমত্সরঃ । সম সিদ্ধৌ অসিদ্ধৌ চ কৃত্বা অপি ন নিবধ্যতে ।।২২

যিনি অনায়সে যা লাভ করেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকেন,যিনি সুখ-দুঃখ রাগ দ্বেষ ইত্যাদি দ্বন্ধের বশীভূত হন না এবং মাত্সর্যশুন্য,যিনি কার্যের সাফল্য এবং অসাফল্যে অবিচালিত থাকেন তিনি কর্ম সম্পাদন করলেও কর্মফলের দ্বারা কখনো আবদ্ধ হয় না।

গতসঙ্গস্য মুক্তস্য জ্ঞানাবস্থিত চেতসাঃ । যজ্ঞায় আচরতঃ কর্ম সমগ্রম্‌ প্রবলিয়তে ।।২৩

জড়া প্রকৃতির গুনের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে চিন্ময় জ্ঞাননিষ্ট ব্যক্তি ভগবানের উদ্দেশ্যে সমর্পিত যজ্ঞের উদ্দেশ্যে যে কর্ম সম্পাদন করেন সে সকল কর্ম সম্পুর্নরুপে লয় প্রাপ্ত হয়।

ব্রহ্ম অর্পনম্‌ ব্রহ্ম হবিঃ ব্রহ্ম অগ্নৌ ব্রহ্মণা হুতম্‌ । ব্রহ্ম এব তেন গন্তব্যম্‌ ব্রহ্ম কর্ম সমাধিনা ।।২৪

যিনি কৃষ্ণ ভাবনায় সম্পুর্ন মগ্ন তিনি অবশ্যই চিত্জগতে উন্নিত হবেন,কারন তার সমস্ত কার্য কলাপ চিন্ময়।তার কর্মের উদ্দেশ্য চিন্ময় এবং সেই উদ্দেশ্যে তিনি যা নিবেদন করেন তাও চিন্ময়।

দৈবম্‌ এব অপরে যজ্ঞম্‌ যোগিনঃ পর্যুপাসতে । ব্রহ্ম অগ্নৌ অপরে যজ্ঞম্‌ যজ্ঞেন এব উপযুহ্বতী ।।২৫

কোন যোগী অধীদেবতাদের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করার মাধ্যমে তাদের উপসনা করেন।আবার ,অন্য অনেক পরম ব্রহ্মরুপ অগ্নিতে সব কিছু নিবেদন করার মাধ্যমে যজ্ঞ করেন।

শ্রোত্রাদীনি ইন্দ্রিয়ানি অন্যে সংযম্‌ অগ্নিষু জুহ্বতী । শব্দদীন্‌ বিষয়ান অন্যে ইন্দ্রিয় অগ্নিষু জুহ্বতী ।।২৬

কেউ কেউ মন সংযম রুপ অগ্নিতে শ্রবন আদি ইন্দ্রিয়গুলিকে আহুতি দেন আবার অন্য অনেকে ( নিয়মনিষ্ঠ গৃহস্তেরা) শব্দাদি ইন্দ্রিয়ের বিষয়কে ইন্দ্রিয়রুপ অগ্নিতে আহুতি দেন।

সর্বানি ইন্দ্রিয় কর্মানি প্রান কর্মানি চ অপরে । আত্ম সংযম্‌ যোগ অগ্নৌ জুহ্বতী জ্ঞান দীপিতে ।।২৭

মন এবংইন্দ্রিয় সংযমের মাধ্যমে যারা আত্মজ্ঞান লাভের প্রয়াসী তারা তাদের ইন্দ্রিয় সমস্ত কার্য কলাপ এবং প্রান বায়ুর দ্বারা প্রদীপ্ত আত্মা সংযমরুপ অগ্নিতে আহুতী দেন।

দ্রব্যযজ্ঞঃ তপোযজ্ঞঃ যোগযজ্ঞঃ তথা অপরে । সাধ্যায় জ্ঞানযজ্ঞাঃ চ যতঃ সংশিত ব্রতাঃ ।।২৮

কেউ কেউ দ্রব্য দানরুপ যজ্ঞ করেন। কেউ কেউ তপস্যারুপ যজ্ঞ করেন কেউ কেউ অষ্টাঙ্গ যোগরুপ যজ্ঞ করেন এবং অন্য অনেকে পারমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য বেদ অধ্যায়নরুপ যজ্ঞ করেন।

অপানে জুহ্বতীপ্রাণম্‌ প্রাণে অপানম তথা অপরে । প্রাণ অপান গতী রুদ্ধা প্রাণায়াম্‌ পরায়ণাঃ । অপরে নিয়ত আহারাঃ প্রাণান প্রানেষু জুহ্বতী ।।২৯

আর যারা প্রাণায়াম চচ্চায় আগ্রহী তারা অপান বায়ুকে প্রাণবায়ুতে এবং প্রান বায়কে অপান বায়ুতে আহূতী দিয়ে অবশেষে প্রাাণ এবং অপান বয়ুর গতী রোধ করে সমাধিস্থ হন। কেউ আবার আহার সংযম করে প্রাণ বায়ুকে প্রাণবয়ুতেই আহুতী দেন।

সর্বে অপি এতে যজ্ঞবিদঃ যজ্ঞ ক্ষপিত কল্মষাঃ । যজ্ঞশিষ্ট অমৃতভূজঃ যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্‌ ।।৩০

তারা সকলে যজ্ঞ তত্তবিত্ এবং যজ্ঞের প্রভাবে পাপমুক্ত হয়ে তারা যজ্ঞশিষ্ট অমৃত আস্ব্বাদন করেন। তারপর সনাতন প্রকৃতিতে ফিরে যান।

ন অয়ম্‌ লোকাঃ অস্তি অযজ্ঞস্য কুতঃ অন্যঃ কুরুসত্তম্‌ ।।৩১

যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউ এই জগতে সুখে থাকতে পারে না, সুতরাং পরলোক প্রাপ্তির পরে তাদের কি হবে?

এবম্‌ বহুবিধাঃ যজ্ঞাঃ বিততাঃ ব্রাহ্মন মুখে । কর্মজান বিদ্ধি তান সর্বান এবম্‌ জ্ঞাত্বা বিমক্ষ্যসে ।।৩২

এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিগ শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়েছে এবংএই সমস্ত যজ্ঞ বিভিন্ন প্রকার কর্মজাত। তা যথাযথভাবে জানার মাধ্যমে তুমি মুক্তি লাভ করতে পারবে।

শ্রেয়ান দ্রব্যময়াত্ যজ্ঞাত্ জ্ঞানযজ্ঞঃ পরন্তপ । সর্বম্‌ কর্ম অখিলম্‌ পার্থ জ্ঞানে পরিসমাপ্যতে ।।৩৩

হে পান্ডব দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়-হে পার্থ সমস্ত কর্মই চিন্ময় জ্ঞানে পরিসমাপ্তি লাভ করে।

তত্ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া । উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানম্‌ জ্ঞানিনঃ তত্ত্বঃ দর্শিনঃ ।।৩৪

সদগুরু শরনাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর। বিনম্র চিত্তে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃতিম সেবার দ্বারা তাকে সন্তুষ্ট কর তা হলে সেই তত্ত্বদ্রষ্টা পুরুষ তোমাকে জ্ঞান উপদেশ দান করবে।

যত্ জ্ঞাত্বা ন পুন মোহম এবম্‌ যাস্যসি পান্ডবা । যেন ভূতানি অশেষানি দ্রক্ষ্যসি আত্মনি অথো ময়ি ।।৩৫

হে পান্ডব এইভাবে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করে তুমি আর মোহগ্রস্ত হবে না।যখন জানবে সমস্থ জীবই আমার বিভিন্ন অংশ এবং তারা সকলেই আমাতে অবস্থিত এবং তারা সকলেই আমার।

অপি চেত্ অসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপ কৃত্তমঃ । সর্বম জ্ঞানপ্ল্লাবেন এব বৃজিনম্‌ সন্তরিষ্যসি ।।৩৬

তুমি যদি পাপিদের চেয়েও পাপিষ্ট হয়ে বলে গন্য হয়ে থাক,তা হলে এই জ্ঞানরুপ তরনীতে আরেহন করে তুমি দুঃখ সমুদ্র পার হতে পারবে।

যথা এধাংসী সমিদ্ধঃ অগ্নিঃ ভস্মস্যাঃ কুরুতে অর্জুন । জ্ঞানাগ্নি সর্ব কর্মানি ভস্মস্যাত্ কুরুতে তথা ।।৩৭

প্রবল রুপে প্রজ্জলিত অগ্নি যেমন কাষ্টকে ভস্মস্যাত্ করে ,হে অর্জুন তেমনী জ্ঞানাগ্নি সমস্ত কর্মকে দগ্ধ করে ফেলে।

ন হি জ্ঞানেন সদৃশম্‌ পবিত্রম্‌ ইহ বিদ্যতে । তত্ সময় যোগ সংসিদ্ধঃ কালেন আত্মনি বিন্দতি ।।৩৮

চিন্ময় তত্ত্ব জ্ঞানের মত পবিত্র পদার্থ এই জগতে আর নাই। এই জ্ঞান সমস্ত যোগের ফলশ্রুতি এবং ভক্তি চর্চ্চার মাধ্যমে যিনি সেই জ্ঞান আয়ত্ত করেন,তিনি কালক্রমে আত্মার পরাশক্তি লাভ করে।

শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম্‌ তত্পরঃ সংযত ইন্দ্রিয়ঃ। জ্ঞানম্‌ লব্ধা পরাম্‌ শান্তিম্‌ অচিরেন অধিগচ্ছতি ।।৩৯

সংযতেন্দ্রিয় ও তত্পর হয়ে চিন্ময় তত্ত্বজ্ঞানে শ্রদ্ধাবান ব্যক্তি এইজ্ঞান লাভ করেন,সেই দিব্যজ্ঞান লাভ করে তিনি অচিরেই পরাশান্তি লাভ হন।

অজ্ঞঃ চ অশ্রদ্দধ্যানঃ চ সংশয় আত্মা বিনশ্যতি । ন অয়ম লোক অস্তি ন পরাঃ ন সুখম্‌ সংশয় আত্মম ।।৪০

মুর্খ এবং শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখন ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না।সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহ লোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।

যোগ সংন্যাস্ত কর্মনাম জ্ঞান সংছিন্ন সংশয়ম । আত্মবন্তম ন কর্মনি নিবধ্নন্তি ধনঞ্জয় ।।৪১

অতএব হে ধনঞ্জয় যিনি নিস্কাম কর্ম যোগের দ্বারা কর্মত্যাগ করেন,জ্ঞনের দ্বারা সংশয় নাশ করেন এবং আত্মার চিন্ময় সরুপ অবগত হন তাকে কোন কর্মে আবদ্ধ করতে পারে না।

তস্মাত্ অজ্ঞান সম্ভূতম্‌ হৃত্স্তম জ্ঞান অসিনা আত্মনঃ । ছিত্ত্বা এনম্‌ সংশয়ম যোগম্‌ অতিষ্ঠ উতিষ্ঠ ভারত ।।৪২

হে ভারত তোমার হৃদয় যে অজ্ঞান প্রসুত সংশয়ের উদয় হয়েছে তা জ্ঞানরুপ খড়গের দ্বারা ছিন্ন কর। যোগাশ্রয় করে যুদ্ধ করার জন্য উঠে দাড়াও।

ওং তত্সদিতি শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাসূপনিষত্সু ব্রহ্মবিদ্যাযাং যোগশাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণার্জুনসংবাদে জ্ঞানকর্মসংন্যাসযোগো নাম চতুর্থোঽধ্যাযঃ ॥৪॥

comments powered by Disqus